একটি মহান আধ্যাত্মিক সফর ।
মদীনা থেকে কারবালা ।
পর্ব – ০২ ।
লেখাটি শুরুর পূর্বে দুটি কথা পাঠকদের উদ্দেশ্য বিনীত নিবেদন এই যে ,
আমি সহ আমরা অনেকেই কারবালা ঘটনার পূর্নাঙ্গ সঠিক ইতিহাস জানি না ।
তবে কথা দিলাম যে , পর্বগুলি ধৈর্য সহকারে পড়ুন , অনেক অজানা ঘটনা জানতে পারবেন , ইনশা আল্লাহ ।
বিশেষ করে ইমাম হোসেন (আঃ) কবে কোন তারিখে সংগী সাথী এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ইরাকের কুফা নগরীর উদ্দেশ্যে প্রিয় জন্মভূমি মদীনা ছেড়ে রওয়ানা হলেন ।
দীর্ঘ এই সফরে পথিমধ্যে ওনাদেরকে কারা কিভাবে কারবালা নামক স্থানে এনে চর্তুদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলেছিল । ওনারা তখন না পারছিলেন সামনে অগ্রসর হতে , না পারছিলেন অন্য কোথাও চলে যেতে ।
শর্ত দেওয়া হয়েছিল – হয় ঈয়াযীদের প্রতি আনুগত্য বা বাইয়াত গ্রহন কর নতুবা মৃত্যুকে বেছে নাও !
যাইহোক , এই লেখার উদ্দেশ্য হল যে , কুফা নগরীতে যাওয়ার জন্য ইমাম হোসেন (আঃ) তার সংগী সাথী এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ২৮শে রজব ৬০ হিজরীতে মদীনা ত্যাগ করেন । ওনাদের যখন কারাবাল নামক স্থানে এনে চর্তুদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলা হল সেদিনটি ছিল ০৩রা মহরম ৬১ হিজরী ।
দীর্ঘ এই সফরে ইমাম হোসেন (আঃ) এর কাফেলা কোন কোন এলাকা অতিক্রম করেছিলেন এবং ঐ সকল এলাকাতে সংঘটত বিশেষ বিশেষ ঘটনা সমূহ এই লেখাতে সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ননা কর হল ।
লেখাটি অত্যন্ত দীর্ঘ হওয়াতে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক পর্বে দেয়া হল ।
আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব ।
সাফ্ফা –
বুধবার ৯ই জিলহজ্ব ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) সাফফা নামক স্থানে পৌছান । তিনি সেখানে তাঁর সফর সঙ্গিদের উদ্দেশ্যে বলেন , আমি স্বপ্নে আমার নানা হজরত মোহাম্মাদকে (সাঃ) দেখেছি । তিনি আমাকে এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব দান করেছেন আমি অবশ্যই তা সম্পাদন করব ।
উক্ত স্থানে ফারাযদাক্ব নামক একজন কবির সাথে ইমাম হুসাইনের (আঃ) সাক্ষাত হয় ।
সে কুফার জনগনের অবস্থা সম্পর্কে তাঁকে অবগত করে । সে বলে , হে ইমাম (আঃ) ! কুফার জনগণের অন্তর আপনার সাথে । কিন্তু তরবারি বণী উমাইয়ার সাথে।
ইমাম হুসাইন (আঃ) তার উত্তরে বলেন , ভবিষ্যতের সংঘটিত ঘটনাবলি যদি আমার মন মত হোক বা না হোক আমি আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করি । কেননা যাদের অন্তর হক্ব এবং তাকওয়ায় পরিপূর্ণ তারা কখনও সঠিক পথ থেকে পিছু পা হয় না এবং এজন্য তারা ক্ষতিগ্রস্থও হয় না ।
যাতে ইরাক্ব –
১৪ই জিলহজ্ব সোমবার ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) সেখানে পৌছান ।
উক্ত স্থানে হজরত জয়নাবের (সাঃআঃ) স্বামী মদীনার গভর্ণর আমরু বিন সাঈদের কাছ থেকে নিরাপত্তা দানের সত্যায়িত চিঠি নিয়ে আসে এবং ইমাম হুসাইনকে (আঃ) কুফার দিকে যেতে নিষেধ করে ।
কিন্তু ইমাম হুসাইন (আঃ) আমরু বিন সাঈদের চিঠির জাববে লিখেন যে , মুসলমান হচ্ছে তারা যারা আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয় এবং সৎকর্ম করে এবং খোদা রাসুল (সাঃ) থেকে কখনও পৃথক হয় না । যেহেতু তুমি আমাকে নিরাপত্তা দিবে বলেছ সেহেতু খোদা যেন তোমাকে এর সওয়াব দান করুন ।
আব্দুল্লাহ তার দুই সন্তানকে জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য ইমাম হুসাইনকে (আঃ) আবেদন জানায় এবং মক্কার দিকে ফিরে যায় ।
ইমাম হুসাইন (আঃ) এখানে আমরু বিন সাঈদকে একটি চিঠি লিখেন । চিঠির বিষয়বস্তু ছিল আল্লাহর নিরাপত্তা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম । আমরা যেন এ দুনিয়াতে তাকে ভয় করি যেন আখেরাতের নিরাপত্তা অর্জন করতে পারি ।
হাজের –
মঙ্গলবার , ১৫ই জিলহজ্ব , ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) হাজের নামক স্থানে পৌছান ।
তিনি সেখান থেকে “কাইস বিন মুসহের” এর মাধ্যমে কুফাবাসীদের উদ্দেশ্যে বার্তা প্রেরণ করেন । তিনি চিঠিতে লিখেন যে , মুসলিমকে তোমাদের সাহায্যে সহযোগিতার কথা আমি শুনেছি । আল্লাহ তোমাদেরকে উক্ত কাজের জন্য উত্তম প্রতিদান দান করবেন । যখন মুসহের তোমাদের কাছে পৌছাবে তখন তোমরা তার কাজে সাহায্যে করবে । আমিও কিছু দিনের মধ্যে তোমাদের মাঝে পৌছে যাব , ইনশা আল্লাহ ।
কিন্তু কাইসকে পথিমধ্যে বন্দি করা হয় । তখন সে বাধ্য হয়ে ইমাম হুসাইনের (আঃ) চিঠিটি ছিড়ে ফেলে যেন কেউ তা সম্পর্কে অবগত না হতে পারে ।
তারপরে তাকে বন্দি অবস্থায় কুফার দারুল আমারতে উবাইদুল্লাহ এর কাছে উপস্থিত করা হয় । তাকে বলা হয় যে সকল ব্যাক্তিরা ইমাম হুসাইনকে (আঃ) চিঠি লিখে দাওয়াত করেছিল তিনি যেন তাদের নামগুলো বলে দেয় অথবা জনসম্মুখে ইমাম হুসাইন (আঃ) এবং তার ভাই এবং পিতাকে গালমন্দ করে ।
তখন তিনি দারুল আমারার ছাদের উপরে যেয়ে হযরত আলী (আঃ) এবং তাঁর সন্তানদের প্রসংশা শুরু করেন এবং ইবনে যিয়াদ এবং তার সঙ্গীসাথীদেরকে তিরষ্কার করে এবং ইমাম হুসাইন (আঃ) এর কুফাতে আগমনের খবর দেয় এবং জনগণকে তাঁর সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে ।
তখন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের নির্দেশে তাকে ছাদের উপর থেকে ফেলে দেয়া হয় এবং তার শরীরকে টুকরা টুকরা করে দেয়া হয় এবং এভাবে তিনি শাহাদত বরণ করেন ।
খুযাইমিয়াহ –
শুক্রবার , ১৮ই জিলহজ্ব , ৬০ হিজরীতে তিনি খুযাইমিয়াহ নামক স্থানে পৌছান ।
ইমাম হুসাইন (আঃ) সেখানে একদিন এবং এক রাত অতিবাহিত করেন । কিছু লোক তাঁর সে আধ্যাত্মিক সফরে যোগ দেয় । যোহর বিন কাইন ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ।
ইমাম হুসাইন (আঃ) এখানে তার বোন হজরত জয়নাব (সাঃআঃ) কে বলেন , হে আমার বোন ! খোদা আমাদের জন্য যা ঠিক করে রেখেছেন তাই ঘটবে ।
দ্বিতীয় পর্বের এখানেই সমাপ্তি ।
আগামী ৩য় পর্বে থাকছে যারুদ নামক স্থানের ঘটনা সমূহ , ইনশা আল্লাহ ।
প্রিয় পাঠক ,
এই লেখাটি যদি আপনাদের ভাল লাগে দয়া করে অবশ্যই জানাবেন ।
কেননা আপনার আগ্রহের উপর নির্ভর করছে ৩য় পর্ব ।