|
পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
একটি মুনাজাত যা দ্বারা তিনি (হযরত ইমাম জয়নাল আাবেদীন) তাঁর মিনতি শুরু করেছেন তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং মহিমা প্রকাশ করে শুরু করেছেন।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জস্য যিনি আদি। যার পূর্বে কেউ ছিলনা। এবং তিনি আদান্ত, যার পরে আর কেউ থাকবে না।
ঐ সমস্ত চোখ তাঁকে পুরোপুরি চাক্ষুষ দেখতে পারে না, যারা তাকে দেখেছেন। তিনি ঐ সমস্ত লোকের কল্পনার অতীত, যার তাঁর প্রশংসা করে।
তঁর কুদরতের দ্বারা তিনি প্রত্যেক সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তাঁর এরাদা অনুযায়ী তাদের কাঠামো গঠন করেছেন।
তারপর তিনি তাদেরকে তাঁর নির্দিষ্ট পথে পরিচালনা করান এবং তাঁর পছন্দনীয় রাস্তায় তাদেরকে পতিস্থাপনকরেছেন।
তাদের কোনো সামর্থ্য নেই ওখানে অপেক্ষা করার যেখানে আল্লাহ্ তাদেরকে জলদি করিয়ে দেন এবং তাদের ওখানে জলদি করার সামর্থ্য নেই যেখানে আল্লাহ্ অপেক্ষা করিয়ে দেন।
তিনি প্রত্যেক রুহ-এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জীবিকা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। তিনি সবার জন্য রিযিক বন্টন করে রেখেছেন। তিনি যা বৃদ্ধি করেছেন কেউ তা হ্রাস করতে পারে না এবং তিনি যা হ্রাস করেছেন
কেউ তা বৃদ্ধি করতে পারে না। তিনি প্রত্যেকের জন্য জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় লিপিবদ্ধ করেছেনএবং প্রত্যেকে দুনিয়াতে এসে যে দিনগুলো অতিবাহিত করবে তাও তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এবং
প্রত্যেকে তার জীবনের বছরগুলোর মধ্যে ঐ দিনগুলোতে উপনীত হবেন। আর যখন কেউ একজন তার জীবেনের অনুমোদিত সময় পূর্ণ করে শেষ সীমায় পৌঁছায়, মহান প্রতিপালক তখন তাকে তার
আমন্ত্রিত বস্তু হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তিনি তাঁর বিচার অনুযায়ী যেমন ইচ্ছে তাকে প্রচুর পুনষ্কার দান করেন অথবা তাকে ভয়ানক শাস্তি দেন। পাপীদেরকে তাদের কাজের প্রতিদান স্বরূপ শাস্তি দেন এবং
নেককারদের তিনি অফুরন্ত প্রতিদান দান করেন। তাঁর নামগুলো পবিত্র এবং আবৃত্তশীল বস্তসমূহ তাঁর নেয়ামত। তিনি যা করেন তার জন্য জিজ্ঞাসিত হবেন না কিন্তু অন্যরা জিজ্ঞাসিত হবে। সকল প্রশংসা
আল্লাহর জন্য, কারণ তিনি তাঁর সৃষ্টির (প্রশংসা পাওয়ার অধিকার রাখেন) প্রশংসার জন্য মোহ্তাজ নন। তারা (অকৃতজ্ঞভাবে) তাঁর নেয়ামত ভোগ করে থাকে যা সব সময় তিনি প্রবাহমান রেখেছেন। তারা
হয়ত তার প্রতি চির কৃতজ্ঞ না থেকেই তাঁর নেয়ামতের উন্নয়ন সাধন করে থাকে।
এবং তারা যদি এমন করে থাকে তাহলে তারা মানবতার সীমানার বাইরে চলে গেছে এবং পশুদের নিকটবর্তী পৌঁছেছে। তাদেরকে ঐ কথা বিবেচনা করতে যা আল্লাহ তা’য়ালা তার চমৎকার কিতাবে বয়ান
করেছেন, “তারা জানোয়ার অথবা তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের বৈ আর কি?”
আল্লাহ তাঁর কৃতজ্ঞ পাশে আবদ্ধ হওয়ার জন্য তাঁর নিজের সমন্ধে আমাদের যা শিক্ষা দিয়েছেন এজন্য তাঁর প্রশংসা করছি। তাঁর স্বর্গীয় জ্ঞানের দ্বার আমাদের জন্য খুলেছেন। তিনি আমাদের তাঁর
একত্ববাদের পবিত্র বিশ্বাসের উপর আমাদের পরিচালনা করেছেন এবং আমাদেরকে এর বিরোধিতা করা থেকে হেয়াজত করেছেন, এমনকি তিনি তাঁর আদেশ পালনে সন্দেহ থেকেও আমাদের বিরত
রেখেছেন।
আমরা তাঁর প্রশংসা করছি যদ্বারা আমরা তাঁর ঐ সকল সৃষ্টির মধ্যে গণ্য হতে পারি যার তাঁর প্রশংসা করে। যা দ্বারা কবুলিয়াত এবং ক্ষমা খোঁজ করে। তাঁর প্রশংসা করছি এ জন্য যাকে তিনি আমাদের
মৃত্যু এবং বিচার দিবসের মধ্যবর্তী সময়কালে আলোকিত করে অন্ধকার বিদুরিত করেন এবং আমাদের পুনরুখান সহজ করে দেন। যা দ্বারা সাক্ষী উপস্থিত করার সময় আমরা আমাদের অবস্থান উন্নীত
করতে পারি, ঐ দিন যখন প্রত্যেক রহ্কে তাদের কাজ অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে এবং তাদের বেলায় কোনো ভুল হবে না। ঐ দিন যখন কোনো বস্ধুই তার বন্ধুকে সাহায্য করবে না, আর কেউ তার
বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্যও প্রাপ্ত হবে না। প্রতিপালকের প্রশংসা যা আমাদের থেকে উদ্গত হয়ে বেহেশতের উচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়, যা লিখিত কিতাবে (কোরআনে) বিদ্যমান। এমন এক সাক্ষীস্বরূপ যার
সাহায্যে আল্লাহর কাছে পৌঁছা যায়। আল্লাহর প্রশংসা এজন্য যে যা দ্বারা আমাদের চোখ পরিতৃপ্তি লাভ করবে যখন আমাদের চোখ দিয়ে অশ্রু বইবে, আর যা দ্বারা আমাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে যখন
অন্যদের মুখমন্ডল কালো হবে। তাঁর প্রশংসা এজন্য যাতে আমরা আল্লাহ প্রদত্ত আগুন থেকে মুক্তি লাভ করে তাঁর অনুকূল পরিবেশে যেতে পারি। যা দ্বারা আমরা করুণা লাভের জন্য ফেরেশতাদেরকে তঁর
কাছে পাঠাতে পারি এবং যা দ্বারা আমরা তাঁর দূতের (নবীজীর) সাথে মিলিত হয়ে স্থায়ী বাসস্থানে বাস করতে পারি, যা আর কেড়ে নেয়া হবে না এবং তার সাথে সম্মানীয় এক স্থানে, যা আর পরিবর্তন হবে
না।
আল্লাহর জন্য প্রশংসা যিনি আমাদের জন্য সৃষ্টির সৌন্দর্য পছন্দ করেছেন। আমাদের জন্য পুষ্টিকর খাঁটি উপাদান তৈরী করেছেন এবং আমাদেরকে সকল সৃষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাঁর ক্ষমতার
কারণে যাতে তারা আমাদের অনুগত হয় এবং তাঁর কর্তৃত্বের জন্য তারা আমাদের খেদমতে নিযুক্ত।
আল্লাহর জন্যই প্রশংসা যিনি ভিক্ষার সকল দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন, শুধু তাঁর দরজা ব্যতিরেকে।
এখন, কারও পক্ষে তাঁর যথাযখ প্রশংসা করা কিভাবে সম্ভব?
আমরা কিভাবে তাঁকে যথাযথভাবে ধন্যবাদ জানাতে পারি? আমরা তা করতে পারব না।
প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সম্প্রসারণের অঙ্গসমূহ এবং সংকোচনের অঙ্গসমূহ আমাদেরকে দান করেছেন। আমাদেরকে জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণ দান করেছেন। নড়াচড়া করার জন্য আমাদের মধ্যে
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থাপন করেছেন। আমাদেরকে স্বাস্থ্য-সম্মত উপকরণ দ্বারা আহার করান। তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা তিনি আমাদেরকে স্বাধীন করেছেন এবং আমাদেরকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন তাঁর দয়ার দ্বারা। তিনি
আমাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য বারণ করেছেন যাতে তিনি আমাদের আনুগত্য পরখ করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে বলেছেন যাতে তিনি াামাদের কৃতজ্ঞতা পরখ করতে পারেন।
কিস্তু আমরা তাঁর নির্দেশিত রাস্তা থেকে বিচ্যুত এবং এরকম কাজ যা আমাদের প্রতি তাঁকে ক্রোধাম্বিত করে। কিন্তু তিনি আমাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য অধীর হন না, আর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ব্যস্তও হন
না। উপবস্তু তিনি তাঁর দয়ার দ্বারা আমাদের শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকেন এবং তাঁ অনুগ্রহশীল ক্ষমার দ্বারা তাঁর আনুগত্যে আমাদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করেন।
আর প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে অনুতাপের দিকে প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন। যা আমরা তাঁর অনুগ্রহ বৈ কখনও অর্জন করতে পারতাম না। যদি আমরা তাঁর আনকূল্য ধর্তব্য জ্ঞান না করতাম,
বিশেষ করে এটি আমাদের প্রতি তাঁর আনুকূল্য তারপরও প্রশংসার দাবি রাখে এবং আমাদের প্রতি তার গুরুত্ব অতুলণীয়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে তিনি ঐ সমস্ত লোকদেরকে অনুতাপের সুযোগ দেন নি যারা
আমাদের পূর্বে এসেছিল (পূর্ববর্তী উম্মতগণ)
চেয়ে দেখ তিনে আমাদের উপর থেকে বোঝা অপসারণ করেছেন, যা বহন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের সামর্থ্যরে বাইরে তিনি আমাদের জন্য কোনো দায়িত্ব বর্তিয়ে দেন নি এবং তিনি সহজ
ব্যতিরেকে আমাদেরকে কোনো আদেশ করেন নি। এভাবে তিনি আমাদের মধ্যে কাউকেই কোনো কাঠিন্য দিয়ে পিছনে রাখেন নি অথবা অবাধ্য হওয়ার সুযোগ রাখেন নি।
তাই আমাদের মধ্য থেকে তারা ধবংস হোক যারা তাঁর আদেশকে অগ্রাহ্য করবে। ওরা সুখী হবে যারা তাঁরা তাঁর কাছে প্রত্যাশা রাখে।
সমস্ত বন্দার সাথে আল্লাহর প্রশংসা করছি। যা দ্বারা ফেরেশতাদের কর্তৃক আল্লাহ প্রশংসিত হন। ঐ সকল সুষ্টি দ্বারা যারা তাঁর কাছে সম্মানিত এবং তাদের দ্বারা যারা তাঁর দ্বারা উত্তীর্ণ হয়েছে। এমন এক
প্রশংসা যার মধ্যে সকল প্রশংসা বিদ্যমান যেমন নাকি সমস্ত সৃষ্টির মহত্ত্ব বর্ণনা করা।
তারপর আল্লাহর প্রশংসা করছি আমাদের উপর এবং তাঁর সমস্ত বান্দাদের উপর দেয়া নেয়ামতের জন্য যারা আছে এবং অতীতে ছিল। আর মাখলুকের সংখ্যাটা যা তাঁর জ্ঞানে মজুদ রয়েছে।
আর প্রতিটি নেয়ামতের জন্য ঐ সংখ্যা বরাবর প্রশংসা এবং বহুগুণ বেশি প্রশংসা করছি। অনবরত এবং সীমাহীনভাবে পূনরুখানের পূর্ব পর্যন্ত। তাঁর প্রশংসার কোনো সীমা নেই, এবং প্রশংসার কোনো
হিসাব নেই। প্রশংসার ব্যাখ্যায় কোনো শেষ নেই এবং সময়ের কোনো সীমা নেই।
আমরা ঐ দয়ার জন্য প্রশংসা করছি যা আমাদের আমলের সাথে তাঁর সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং আমাদের জন্য তাঁর ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। যা হল তাঁকে পরিতৃপ্ত করার এক ধারণা; তাঁর ক্ষমার এক
যর্থার্থ উপায় তাঁর বেহেশতের পৌঁছার এক রাস্তা; তঁর শাসন থেকে আত্মরক্ষার উপায়; তাঁর রাগ হতে বাঁচার নিরাপত্তা; তাঁর খেদমত করার একটি সহযোগী; তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়ার চেয়ে একটি
উপায়; এবং আমাদের পারিশ্রামিক পাওয়ার সহায়ক এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকা।
ঐ দয়ালু আল্লাহর প্রশংসা করছি যা দ্বারা আমরা তাঁর ঐ সমস্ত প্রিয় কল্যাণ প্রাপ্তদের মধ্যে হতে পারি এবং ঐ সমস্ত শহীদদের অন্তর্ভূক্ত হতে পারি যারা তাঁর শত্রুর তালোয়ারের নীচে জীবন বিলিয়ে
দিয়েছেন।
ভাল করে দেখে নাও যে, সেই আমাদের প্রভু। যিনি সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত।
Ref: হযরত ইমাম জয়নাল আবেদীন আল ছহীফাহ্ আল সাজ্জাদীয়াহ্
অনুবাদ মুহাম্মদ মাঈনউদ্দিন
অন্যধারা, ৩৮/২-ক বাংলাবাজার (৫ম তলা) ঢাকা-১১০০
প্রকাশকাল : সেপ্টেম্বর ২০০৮
বাংলা অনুবাদ: প্রকাশক ২০০৮